পৃষ্ঠাসমূহ

Adds For Help Me

২৩ আগ, ২০১৭

জিলহজ্জ মাসের আমল

আসসালামু আলাইকুম
বিসমিল্লাহ-হির রাহ'মানীর রাহী'ম।
আস সালামু আ'লাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
(১) আজ মংগলবার ২৮-শে যিলক্বদ। আজকের দিন সহ এই মাসের আর মাত্র ২ বা ৩ দিন বাকি আছে। এই মাসের তিন দিনের রোযা যাদের এখনো বাকি আছে তারা মাস শেষ হওয়ার পূর্বেই পূরণ করে নিন।
(২) আগামী বৃহস্পতি কিংবা শুক্রবার থেকে যিলহজ্জ মাস শুরু হবে। যিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের ইবাদত রমযানের শেষের দশদিনের মতো অনেক বেশি ফযীলতপূর্ণ। সুতরাং রমযানের মতোই এই দিনগুলোতে বেশি বেশি ইবাদত করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
(৩) আমাদের পোস্টে কোন প্রশ্ন বা মন্তব্য করবেন না। 
_____________________________________
ই’লম : মানব জাতি শ্রেষ্ঠ হওয়ার কারণ
আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “যারা জানে, আর যারা জানে না, তারা কি কখনো সমান হতে পারে?” সুরা আয-যুমারঃ ৯।
আল্লাহ তাআ’লার সমস্ত সৃষ্ট জীবজগতের মাঝে মানুষ হচ্ছে শ্রেষ্ঠ। সমস্ত মানুষের মাঝে শ্রেষ্ঠ হচ্ছেন, যারা নবী ও রাসুল তাঁরা। আর সমস্ত নবী ও রাসুলদের মাঝে শ্রেষ্ঠ হচ্ছেন আমাদের নবী মুহা’ম্মাদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম। স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন আসতে পারে, সৃষ্টির মাঝে এই শ্রেষ্ঠত্বের তারতম্য কিসের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত?
.
এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছেঃ ই’লম বা দ্বীনের জ্ঞান। 
আমরা যদি মানব জাতির সৃষ্টির সূচনার দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাই যে, আল্লাহ তাআ’লা যখন আদম আ’লাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার ইচ্ছা ফেরেশতাদের কাছে ব্যক্ত করেছিলেন, তখন ফেরেশতারা বলেছিলো, “(আয় আল্লাহ)! আপনি কি এমন কোন জাতি সৃষ্টি করবেন, যারা পৃথিবীতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করবে এবং অন্যায় রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরাই তো প্রতিনিয়ত আপনার প্রশংসা করছি এবং আপনার পবিত্র সত্ত্বার যিকির (স্মরণ) করছি।” সুরা আল-বাক্বারাহঃ ৩০। 
ফেরেশতাদের এই কথা বলার কারণ হচ্ছে, তাঁরা মনে করেছিলো আল্লাহর ইবাদতকারী বান্দা হিসেবে তারাই বুঝি শ্রেষ্ঠ। তখন আল্লাহ তাআ’লা বলেছিলেন, “নিঃসন্দেহে আমি যা জানি, তোমরা তা জান না।”
যাই হোক, ফেরেশতা ও জিন জাতির তুলনায় মানব জাতি যে শ্রেষ্ঠ, সেটা সবার সামনে প্রমান করে দেওয়ার জন্য আল্লাহ তাআ’লা আদম আ’লাইহিস সালামকে সমস্ত জিনিসের নাম শিখিয়ে দিয়েছিলেন, অর্থাৎ তাঁকে ‘ইলম’ দান করেছিলেন। আর তখন ফেরেশতাদের সামনে সেই সমস্ত জিনিসগুলো উপস্থাপন করে তাদেরকে সেই জিনিসগুলোর নাম বলে দিতে বললেন। যেহেতু ফেরেশতারা সেইগুলোর নাম জানতোনা, সেইজন্য তারা একথা বলে নিজেদের অপারগতা প্রকাশ করেছিলেনঃ “(হে আল্লাহ!) তুমি পবিত্র! আমরাতো কোন কিছুই জানি না, তবে তুমি যা আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছ (সেইগুলো ছাড়া)। আর নিশ্চয় আপনি প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা।” সুরা আল-বাক্বারাহঃ ৩২।
.
ফেরেশতারা যখন সেই জিনিসগুলোর নাম বলতে অক্ষম হলো, তখন আল্লাহ তাআ’লা আদম আ’লাইহিস সালামকে সেইগুলোর নাম বলে দিতে বললেন, “তিনি (আল্লাহ) বললেন, হে আদম! ফেরেশতাদেরকে বলে দাও এসমস্ত জিনিসের নাম। তারপর যখন তিনি (আদম) বলে দিলেন সে সবের নাম, তখন তিনি (আল্লাহ) বললেন, আমি কি তোমাদেরকে (ফেরেশতাদেরকে) বলিনি যে, আমি আসমান ও যমীনের যাবতীয় গোপন বিষয় সম্পর্কে খুব ভাল করেই অবগত রয়েছি?”
একথার দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, এটা প্রমান করে দেওয়া যে, মানুষ হিসেবে যেই গুণাবলী ও ইলম দিয়ে আল্লাহ তাআ’লা আদম আ’লাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেছিলেন, তার কারণে ফেরেশতাদের চাইতে আদম উত্তম, এটা বুঝিয়ে দেওয়া। একথা প্রমান করে দেওয়ার পর, আল্লাহ তাআ’লা ফেরেশতাদের এবং ইবলিসকে আদেশ করে বলেন, তোমরা সবাই আদমকে (সম্মান সূচক) সিজদাহ কর। 
.
মানুষের মাঝে সম্পদ, সৌন্দর্য, ক্ষমতা, বংশ বা জাতি দ্বারা মর্যাদা নির্ধারিত হয়না, বরং আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তি তত বেশি সম্মানিত যে যত বেশি ‘মুত্তাক্বী’ বা আল্লাহভীরু। আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্মানিত, যে বেশি মুত্তাক্বী।” সুরা আল-হুজুরাতঃ ১৩।
অনেকে মনে করেন, শুধুমাত্র কুরআন ও হাদীস জানা বা মুখস্থ করার নাম হচ্ছে জ্ঞান, এটা ঠিক নয়। বরং, কুরআন ও হাদীস জানা, তার উপর আমল করা এবং সর্বোপরি, ‘তাক্বওয়া’ বা আল্লাহকে ভয় করে চলার নাম হচ্ছে ই’লম। আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধুমাত্র জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে থাকে।” সুরা ফাতিরঃ ২৮। 
আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেছেন, “যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় অনেক উঁচু করবেন।” সুরা মুজাদালাঃ ১১।
এই আয়াতগুলো দ্বারা এটাই প্রমানিত হয়, ‘ইলম’ দ্বারাই মানুষের তাক্বওয়া অর্জিত হয়, আর তাক্বওয়ার উপর নির্ভর করেই মানুষ আল্লাহর কাছে সম্মানিত হয়। 
.
এতো গেলো কুরআন থেকে প্রমান যে, মানুষের ই’লম হচ্ছে তার শ্রেষ্ঠত্বের কারণ। এবার হাদীসে থেকে ই’লমের ফযীলত নিয়ে কিছু বর্ণনা উল্লেখ করা হলো।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সবচাইতে উত্তম, যে নিজে কুরআন শিখে এবং অন্যদেরকে শিক্ষা দেয়।” সহীহ বুখারীঃ ৫০২৭।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, “একজন আলেমের মর্যাদা একজন আবেদের (অনেক ইবাদতকারী ব্যক্তির) উপরে ঠিক সেইরূপ, যেরূপ আমার মর্যাদা তোমাদের উপর।” সুনানে তিরমিযী। 
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতারা, আসমান-জমিনের সকল বাসিন্দা, এমনকি গর্তের মধ্যে পিঁপড়ে এবং (পানির মধ্যে) মাছ পর্যন্ত মানুষের মাঝে যারা অন্যদেরকে ই’লম শিক্ষা দেয়, তাদের জন্য মঙ্গল কামনা ও নেক দুয়া করতে থাকে।” তিরমিযীঃ ২৬৮৫, দারেমীঃ ২৮৯, হাদীসটি হাসান। 
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, “যে ব্যক্তি ই’লম (কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান) অর্জনের জন্য কোন রাস্তা অতিক্রম করে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের রাস্তাসমূহের মধ্যে একটি রাস্তা অতিক্রম করান। আর ফেরেশতারা তালেবে-ইলম বা জ্ঞান অন্বেষণকারীর জন্য তাদের ডানা বিছিয়ে দেন এবং আলিমের জন্য আসমান ও যমীনের সব কিছুই ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি পানিতে বসবাসকারী মাছও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আবিদের উপর আলিমের ফযীলত এরূপ, যেরূপ পূর্ণিমার রাতে চাঁদের ফযীলত সমস্ত তারকারাজির উপর। আর আলিমগণ হচ্ছেন, নবীদের ওয়ারিস বা উত্তরাধিকারী, এবং নবীগণ দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) ও দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) মীরাস হিসাবে রেখে যান না, বরং তাঁরা রেখে যান ইলম। কাজেই, যে ব্যক্তি ইলম হাসিল করলো, সে প্রচুর সম্পদের মালিক হলো।” আবু দাউদঃ ৩৬৪১, দারেমীঃ ৩৪২, হাদীসটি সহীহ, শায়খ আলবানী রাহিমাহুল্লাহ। 
.
ইলম অর্জন করা বা দ্বীন শিক্ষা করা আমাদের সকলের জন্য ফরয দায়িত্ব। কুরআনের প্রথম ওয়াহীই ছিলো “ইক্বরা”, অর্থ তুমি পড়ো! জিব্রাঈল আ’লাইহিস সালাম যখন হেরা গুহায় সাদা একটা রুমালে লেখা সর্বপ্রথম পাঁচটি আয়াত ওয়াহী হিসেবে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিয়ে এসেছিলেন, তার প্রথম কথাই ছিলো, “ইক্বরা বিসমি রাব্বিকাল্লাযী খালাক্ব”, “পড়ো তোমার পালনকর্তার নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” সুরা আল-আলাক্বঃ ১।
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “(দ্বীনের) জ্ঞান অর্জন করা করা প্রত্যেক মুসলমান (নারী ও পুরুষের) জন্য ফরয।” ইবনু মাজাহঃ ২২৪।
ইমাম সুফিয়ান সাওরী রাহি’মাহুল্লাহ বলেছেন, “আল্লাহকে রাজী-খুশি করার উদ্দেশ্যে ইলম অর্জন করার চাইতে উত্তম কোন ইবাদত আমাদের জানা নেই।” সিয়ার আ’লাম আন-নুবালাঃ ৭/২৪৪।
ই’লমের মর্যাদা সম্পর্কে ইয়েমেনের প্রখ্যাত আলেমে-দ্বীন, শায়খ মুক্ববিল বিন হাদী রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ২০০১) বলেন, “ই’লমের বিষয়টা কতইনা আশ্চর্যজনক! ইলমের মর্যাদা স্বর্ণ, রৌপ্য, সুন্দরী নারী, রাজত্বের চাইতেও উত্তম।”
শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসায়মিন রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ২০০১) বলেন, “দ্বীন শিক্ষা করা এক প্রকার জিহাদ, এ কারণে তালিবুল ই’লম (দ্বীন শিক্ষার্থীদেরকে) যাকাত দেওয়া যায়।”
.
আসুন, আমরা আমাদের দ্বীন শিক্ষা করি, এর দ্বারা নিজেরা উপকৃত হই এবং এর দ্বারা অন্যদেরকেও আলোকিত করি। আল্লাহ আমাদের সকলকে সেই তোওফিক দান করুন (আমিন)। 

কোন মন্তব্য নেই: